বিএনপি না এলেও নির্বাচন একতরফা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি আসবে না বলেই যে নির্বাচন একতরফা হবে-এটা ঠিক নয়, অনেকেই নির্বাচনে অংশ নেবে। একটি দলকে ঘিরে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হতে পারে না। 

বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কমনওয়েলথ প্রাক-নির্বাচনি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, সময়সীমা ঠিক রেখে নির্বাচন কমিশন যদি তফশিল আগে-পিছে করে, তাহলে আওয়ামী লীগের কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচনের বিষয়টা পুরোই ইসির। 

নির্বাচন সম্পন্ন করার একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। এই সময়সীমার ভেতরে থেকে ভোট সম্পন্ন করতে হবে। সময়সীমা ঠিক রেখে তারা যদি কোনো সমন্বয় করে, সেটা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিষয়। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না এলেও অন্য দলগুলো অংশ নিচ্ছে। তাদের উপেক্ষা করবেন কী করে? কারও নির্বাচনে আসা না আসা গণতান্ত্রিক ব্যাপার। অনেক দলই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে। একটা রাজনৈতিক দলের জন্য সবকিছু বলা বা এ ব্যাপারে উপসংহারে পৌঁছা ঠিক নয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, বিএনপি যে সহিংসতা চালাচ্ছে কিংবা চোরাগোপ্তা হামলা করছে সেখানে নিষেধাজ্ঞা কোথায়? আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে তাহলে নিষেধাজ্ঞা কেন? শান্তিপূর্ণ সংসদ নির্বাচনে যারা বাধা দেবে-তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা হওয়া উচিত। জোটের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রার্থিতা ঠিক করা হবে। কার সঙ্গে কার নির্বাচনি সমীকরণ হয়-সেটা মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত চলবে।

দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র আমরা অনুসরণ করি। জনমত জরিপ, সরকারি জরিপ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব একটা সেল আছে। সব মিলিয়ে যার নম্বর বেশি তাকেই মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হয়। সব বিবেচনা করেই গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। 

কমনওয়েলথ প্রাক-নির্বাচনি দলের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তনের কথা অবহিত করা হয়েছে। ইসির আইনগত কাঠামো ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়টিও জানানো হয়েছে। আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি, কোন দেশটি গণতন্ত্রের দিক থেকে পারফেক্ট। সেটা তারাও বলতে পারেননি। কমনওয়েলথ পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, তারা ইতিবাচক। তারা প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। আলোচনায় তাই মনে হয়েছে।

এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীয় সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান, নির্বাচন পর্যবেক্ষক উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাম্বাসেডর মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, সদস্য সচিব এবং অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

নাশকতা-অপপ্রচার প্রতিহত করাই মূল লক্ষ্য : এদিকে বুধবার বিকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটিসমূহের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে নাশকতা ও অপপ্রচার প্রতিহত করাই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য। 

নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোনো চেষ্টাই সফল হবে না জানিয়ে তিনি আরও বলেন, নির্বাচন এসে গেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার চূড়ান্ত হয়েছে। বিদেশ নিয়ে এখন আর মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তারা হামাস-ইসরাইল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। লেবাননের মধ্যে জড়িয়ে গেছে। 
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর এটি আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ। আবারও সারা বাংলায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটিসমূহের সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্লাহ।